আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত

মে, ৭, ২০১৯, ৬:২১ অপরাহ্ণ

alsan ullah master

গাজীপুর প্রতিনিধি :  জনপ্রিয় আওয়ামীলীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ১৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী মঙ্গলবার পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনসহ আওয়ামীলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন সংগঠন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনব্যাপী নানা কর্মসুচি পালন করেছে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূবাইল হায়দরাবাদ গ্রামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের কবরে পু®পার্ঘ্য অর্পণ, কোরান খানি, মিলাদ-দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং খাদ্য বিতরণের আয়োজন করা হয়। সকালে আওয়ামীলীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ছেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন মিয়া, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমীর হোসাইন রাহাত, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহ সামসুল হক রিপন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানসহ আওয়ামীলীগের ও বিভিন্ন সংগঠণের নেতা কর্মীরা প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাষ্টারের কবওে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন ও কবর জিয়ারত করেন। এ ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, আওয়ামীলীগসহ দলীয় অঙ্গ সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) গাজীপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে মরহুমের কবর প্রাঙ্গনে রক্তদান কর্মসূচি ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

দুপুরে হায়দরাবাদ গ্রামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের সমাধিস্থলে এক স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ছেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান, সহসভাতি অ্যাড. ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, নিলীমা আক্তার লিলি, সাইফুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল প্রমুখ।

এদিকে বিকেলে জেলা শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আহসানউল্লাহ মাষ্টার স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. আজমত উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিকেলে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে একইদিন বিকেলে প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টারের স্মরণে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও এলাকায় অনুরুপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

প্রয়াত সাংসদ আহসান উল্ল¬াহ মাস্টারের ছোট ভাই মামলার বাদী মতিউর রহমান জানান, গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা সংসদ সদস্য আহসান উল্ল¬াহ মাস্টার ২০০৪ সালে ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এসময় গুলিতে ওমর ফারুক রতন নামের আরও একজন কিশোর মারা যান। ঘটনার পরদিন নিহতের ছোট ভাই মো. মতিউর রহমান বাদী হয়ে ১৭জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২জনের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ এবং আসামিপক্ষে দুজন সাক্ষ্য দেন। এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে প্রধান আসামী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড, ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং দুইজনকে খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে কয়েক আসামী তাদের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেন। শুনানী শেষে সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুন মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে ছয়জনের মৃত্যুদন্ড, ৮জনের যাবজ্জীবন দন্ডাদেশ দেন। রায়ে দ্রুত বিচার আদালতে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিল এমন ১১জন আসামিকে খালাস দেয়া হয়। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার, মাহবুবুর রহমান ও সোহাগ এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত মোহাম্মদ আলী ও নুরুল আমিনসহ ৮জন বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছে। বাকি দন্ডপ্রাপ্তরা ভারত, ইতালি, বেলজিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে।

উল্লেখ্য, আহসান উল্লাহ মাষ্টার গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসন হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দু’বার সংসদ সদস্য, ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দ’ুদফা পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে উপজেলা পরিষদ বিলোপের পর চেয়ারম্যান সমিতির আহবায়ক হিসেবে উপজেলা পরিষদের পক্ষে মামলা করেন ও দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এক পর্যাযে তিনি গ্রেফতার হন ও কারাভোগ করেন। আহসান উল্লাহ মাষ্টার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।